ফেসবুক থেকে আয় – বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর মধ্যে ফেসবুক একটি বহুল ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যেকদিন উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে থাকে। পুরো বিশ্বে মাসে 2.4 বিলিয়ন অ্যাক্টিভ ফেসবুক ইউজার আছে যাদের মধ্যে 1.4 বিলিয়ন লোক ফেসবুক নিয়মিত ফেসবুকে সক্রিয় থাকে। প্রতি সেকেন্ডে পাঁচটি করে নতুন ফেসবুক একাউন্ট তৈরী হয় আর এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় 44 হাজারেরও বেশি আইটি স্পেশালিস্টরা।
প্রধানত ফেসবুক ইউজারদের মধ্যে আমরা দুটি বিষয় লক্ষ্য করি ।কতিপয় ফেসবুক ইউজার ফেসবুক থেকে আয় করে এবং অন্যরা ফেসবুক থেকে আয় করার বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। এটা খুবই সাধারন বিষয়ে যে ফেসবুক এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাহার হয়, সেখানে একটি আয়ের উৎস তৈরি করার সম্ভাবনা থাকবে। ফেসবুক থেকে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে । সঠিকভাবে পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে কেউ তার বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশল এর মধ্য দিয়ে ফেসবুক থেকে একটি আয়ের উৎস সহজেই তৈরি করে নিতে পারে।
ফেসবুক থেকে আয় বলতে ফেসবুক পেজ তৈরি করে সেখান থেকে আয় করাকে বুঝানো হয়।
ফেসবুক পেজ থেকে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহ:
১. একটি ফেসবুক পেজ তৈরি:
একটি ফেসবুক প্রোফাইল এর অধীনে একাধিক ফেসবুক পেজ তৈরি করতে পারি ।ফেসবুক পেজ গুলো বিজনেস পেজ হতে পারে আবার পার্সোনাল পেজ হতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করবে কোন ধরনের পেজ তৈরি করব। আমরা যদি বিজনেস করতে চাই তাহলে অবশ্যই বিজনেস পেজ তৈরি করব। আমরা সরাসরি আমাদের ফেসবুক প্রোফাইল অ্যাকাউন্ট থেকে কোন আর্নিং সোর্স ক্রিয়েট করতে পারব না তবে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমরা আর্নিংস ক্রিয়েট সোর্স ক্রিয়েট করতে পারব।
২.ফেসবুকে পেজে ভিডিও আপলোড করে আয়:
ফেসবুক থেকে আয়: ইউটিউব এর মত ফেসবুক বিজনেস পেজ অথবা পার্সোনাল ফ্যান পেজে আমরা ভিডিও আপলোড করে বিজ্ঞাপন দেখানোর মধ্য দিয়ে ইনকাম করতে পারি। In-Stream Ads এর মাধ্যমে ফেসবুক পেজে আপলোড করা ভিডিওতে এড শো করানো হয়। যখন কেউ এই বিজ্ঞাপন গুলো দেখে বা ক্লিক করে তখন পেইজের মালিকের আয় হয়।
In-Stream Ads পাওয়ার শর্ত সমূহ:
ফেসবুকেIn-Stream Ads সার্ভিসটি পাওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতার দরকার হয়। কিছু সত্য পূর্ণ না হলে In-Stream Ads সার্ভিসটি চালানো সম্ভব হয়না ফেসবুক পেজে। শর্ত সমূহ নিম্নরূপ:
- In-Stream Ads সার্ভিসটি যেহেতু ফেসবুক পেজেই একমাত্র কার্যকর হয় তাই অবশ্যই আপনার একটা ফেসবুক পেজ থাকতে হবে যেখানে আপনি ভিডিও আপলোড করবেন।
- ফেসবুক পেজটিতে মিনিমাম 10 হাজার লাইক থাকতে হবে।
- ফেসবুক বিজনেস পেজ অথবা পার্সোনাল পেজ এর মালিকের কমপক্ষে 18 বছর বয়স হতে হবে।
- ফেসবুক প্রদত্ত partner monetization policyঅনুসরণ করে ভিডিও তৈরি করতে হবে ।
- ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিওটি কমপক্ষে তিন মিনিট দীর্ঘ দীর্ঘ হতে হবে তা না হলে ফেসবুক বিজ্ঞাপন শো করবে না।
- গত দু’মাসে ফেসবুক পেজের ভিডিওতে কমপক্ষে 30000 থাকতে হবে আর প্রত্যেকটি ভিউ কমপক্ষে এক মিনিটের হতে হবে।
৩. ফেসবুক instant article থেকে আয় করার উপায়:
ফেসবুকের মোবাইল পাবলিশিং টুল একটি হচ্ছে Instant article । এক্ষেত্রে ফেসবুক instant article এর ওয়েবসাইটের ব্লগ বা কনটেন্ট গুলো কে দ্রুত লোড নিতে সাহায্য করে। Instant article এর মাধ্যমে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ওয়েবসাইটের মধ্যে দেখানো যায়। অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল থেকে আয় করে থাকে। Instant article
শুধু এটা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এটার কোন ওয়েব ভার্সন নেই।
৪. লাইক শেয়ার করার মাধ্যমে ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়:
আসলে ফেসবুকে লাইক শেয়ার করা টিনির্ভর করে ফেসবুক পেজের ফলোয়ার অথবা লাইকের ওপর। যখন আপনার অনেক ফলোয়ার বা লাইক থাকে তখন আপনি অন্য কারো ফেসবুক পেইজের প্রমোশন করে দিতে পারবেন অর্থাৎ লাইক বা ফলোয়ার বাড়িয়ে দিতে পারবেন এটা খুবই সহজ হবে যখন আপনার প্রচুর পরিমাণে ফলোয়ার লাইক ফেসবুক পেজে থাকবে। অন্য কারো ফেসবুক পেইজের পোস্ট বা ওয়েবসাইটের পোস্ট শেয়ার করার মধ্য দিয়ে আপনি আয় করতে পারবেন।
৫. ফেসবুকে ব্যবসা করে:
আপনার যদি ফেসবুক পেজে অনেক লাইক ফলোয়ার থাকে তাহলে আপনি সহজেই কোন একটি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন । আপনার যে কোন প্রোডাক্ট বা সেবার মার্কেটিং করে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন। ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্য বা সেবার ব্যবসা করা আয়ের একটি অন্যতম উপায়। কারণ সবসময় ফলোয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের বিশ্বাস করে থাকে।
৬.ফেসবুক গুরুপ থেকে আয় করার কৌশল:
বিভিন্ন পণ্য বা সার্ভিস কেনাকাটার ক্ষেত্রে ফেসবুকের গুরুত্ব অপরিহার্য। ফেসবুকের গ্রুপ এর মধ্য দিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতা মতামত বিনিময় ঘটে। বিক্রেতা বিভিন্ন পণ্য বা সেবা পোস্ট হিসেবে দিয়ে সম্ভাবনাময় ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য বা সেবা বিক্রি করে আয় করতে পারে।
৭. ফেসবুক বিজ্ঞাপন এর মধ্য দিয়ে আয় :
ফেসবুক বিজ্ঞাপন একটি বিস্তরবিষয়। বিজ্ঞাপন এর মধ্য দিয়ে আমরা ব্যবসা ব্যবসাকে প্রসারিত করতে পারি অথবা ফেসবুক বিজ্ঞাপন এর সার্ভিস দিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অর্থ উপার্জন করতে পারি। ফেসবুক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে যেকোনো পণ্য আমরা কাঙ্খিত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করি। একজন ফেসবুক বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ কাঙ্খিত কে তার নিকট পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। ফেসবুক বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞরা সাধারণত অডিয়েন্স রিসার্চ করার মধ্য দিয়ে একটি ফেসবুক বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন রান করে। যা সবসময় সম্ভাবনাময় ফলাফল দিয়ে থাকে। কেউ যদি ফেসবুক বিজ্ঞাপনে এক্সপার্ট হয়ে থাকে তাহলে সে আপওয়ার্ক ও ফাইবার সহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সার্ভিস প্রদান করার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারে।
৮. এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ফেসবুক থেকে আয়:
অ্যাফিলিয়েট হলো অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে কমিশন নেয়া। অর্থাৎ আপনার নিজস্ব ফেসবুক পেজেও অনেক ফলোয়ার বাইকথাকলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তি বা কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রয় করে তার ওপর কমিশন নিতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এক্ষেত্রে আপনি যত বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন তত আপনার আয় হবে। যাদের প্রচুর ফলোয়ার লাইক থাকে তাদের পক্ষে এটা নিতান্তই সহজ কাজ।
আধুনিক বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্ব অপরিহার্য। ফেসবুক হচ্ছে সকল সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি প্লাটফর্ম যেখানে অসংখ্য লোকের মিথস্ক্রিয়া ঘটে নিয়মিত। একটা বেশ সময় মানুষ ফেসবুকেই ব্যয় করে থাকে। যে কেউ তার মেধা খাটিয়ে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করে আয় করতে পারে। ফেসবুক একটি সর্বজনীন সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে পোস্ট ছবি আর্টিকেল এর পাশাপাশি ভিডিও আপলোড করা যায় তাই এখানে আয় করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।