ব্লগিং করে আয় করার সহজ উপায়ঃ আয় করুন মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা!

hwo-to-make-money-form-blogging

ব্লগিং কি? ব্লগিং করে আয় করার সহজ উপায় কি অথবা আসলেই আয় করা যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের পোস্ট।

ব্লগিং করে  কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

একটা  সময় ছিল লেখালেখি করা এবং প্রকাশ করা খুবই কঠিন কাজ । কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে লেখালেখি করা নিজের প্রতিভা বিকাশ এবং মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়ে গেছে একটি সহজ বিষয়। কোন বিষয়ে দক্ষ এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে এমন ব্যক্তি তার ধ্যান-ধারনা এবং চিন্তা চেতনা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লেখালেখির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন এবং তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। একসময়ের শুধু পেপার পত্রিকা ম্যাগাজিন ইত্যাদি হার্ডকপির মধ্য দিয়েই মানুষের লেখালেখি প্রকাশ করা হতো তাই এখানে অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা খুবই কম ছিল। মূলত মানুষ সেসময়ের শুধু শখের বশেই লেখালেখি করত। বর্তমানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে এখন মানুষ নিমিষেই যেকোনো লেখা প্রকাশ করতে পারছে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইট এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্লাটফর্মে। যেহেতু কনটেন্ট রাইটিং তথা ব্লগিং জিনিসটা খুবই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে গেছে তাই একটি কনটেন্ট এর চাহিদা যেমন বেশি তেমনি সেই কনটেন্ট এর জন্য রিসার্চ এবং পরিশ্রম করা অত্যাবশ্যক।

সাধারণত মানুষ লেখালেখি শুরু করে তাদের দক্ষতার বহিঃপ্রকাশের  জন্য। যখন একজন ব্যক্তি কন্টেন্ট রাইটিং তথা ব্লগিং-এ খুবই আগ্রহী হয়ে ওঠে সে ব্লগিং করে তার ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে পারে। আপনারা হয়তো ভাবছেন আসলে ব্লগিং করে কি রকম আয় করা যায়? বা কিভাবে আয় করা যায়? আজকে সে সম্পর্কে বলবো।

ব্লগিং থেকে যেভাবে আয় করা যায়ঃ

ব্লগিং থেকে অনেক ভাবে আয় করা যায় কিন্তু কিছু প্রচলিত আয় করার পদ্ধতি বিদ্যমান। মূলত ব্লগিং থেকে আয় করার বিষয়টি পরিপূর্ণ নির্ভরশীল ট্রাফিকের ওপর। একটি ওয়েবসাইটে যত ট্রাফিক আসবে অর্থাৎ কোন লেখা পড়ার জন্য যত ট্রাফিক আসবে ওয়েবসাইটে ততো আয়ের সম্ভাবনা থাকবে।

আমাদের অনেকেরই ওয়েবসাইট রয়েছে কিন্তু আমরা দ্রুত আর্নিং করতে পারিনা এই বিষয়টি বিভিন্ন ফ্যাক্টর এর ওপর নির্ভরশীল।

যেমন ধরা যাক আমাদের একটা দোকান রয়েছে দোকানে বেচা কিনা কখন বেশি হবে? অবশ্যই যখন  দোকানে প্রচুর পরিমাণে কাস্টমার আসবে তখন বেচাকিনা সম্ভাবনা বেশি থাকবে এবং আমাদের আয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকবে ।দোকানে কাস্টমার কখন কাস্টমার কম আসবে?   যখন লোকজনরা দোকানটি সম্পর্কে অবগত থাকেনা বা দোকানের প্রোডাক্ট এর মান ভালো থাকেনা তখন এই কাস্টমার কম আসে ও বেচাকেনা কম হয় ফলশ্রুতিতে দোকানে ইনকাম কম হয়।

তেমনি ভাবে একটি ওয়েবসাইটের সম্পর্কে যখন লোকজন অবগত থাকেন না  বা  ওয়েব সাইটের কনটেন্ট এর মান তুলনামূলকভাবে ভালো হয় না তখন সে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কম আসে তখন সেই ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কমে যায়।  আমরা বলতে পারি যে ট্রাফিক ইকুয়াল ইনকাম যত ট্রাফিক বেশি তত ইনকাম বেশি। একটি সাইটে যদি আমরা প্রচুর ট্রাঠিক আনতে পারি তাহলে আমরা নিমিষেই একটা ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে পারবো শুধুমাত্র ব্লগিংয়ের মাধ্যমে।

ব্লগিং করে আয় করার পদ্ধতি গুলোঃ

  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয়
  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করার মাধ্যমে আয়
  • বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক থেকে আয়।
  • অনলাইনে কোর্স বিক্রি করার মাধ্যমে আয়।
  • পেইড রিভিউ করে আয়।
  • গেস্ট পোস্টিং এর মাধ্যমে আয়।
  • অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে আয়।
  • লোকাল বিজ্ঞাপন থেকে আয়।

ব্লগিং থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করার কৌশলঃ

ব্লগিং করে আয়: অনেকের কাছে আফিলিয়েট মার্কেটিং টার্মটি পরিচিত কারণ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়টি আজকাল অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে। এখানে মার্কেটিং করার জন্য আমাদের কোন স্টোরের প্রয়োজন হয়না,  নিজস্ব প্রোডাক্ট এর প্রয়োজন হয় না জাস্ট শুধু একটি ল্যান্ডিং পেজের  প্রয়োজন হয় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে সেখান থেকে নিদিষ্ট  কমিশনের মাধ্যমে আমরা আয করতে পারি।

বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন amazon.com alibaba.com daraz.com এই ওয়েবসাইটগুলোতে অনেক সার্ভিস বা প্রোডাক্টের সংগ্রহ রয়েছে সেগুলো আমরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করে কমিশন পেয়ে থাকি।

ব্লগাররা ব্লগিং ওয়েবসাইটে তাদের কনটেন্টের মাঝে এগুলো প্রোডাক্ট এর বিভিন্ন রিভিউ দেওয়ার মাধ্যমে সহজেই বিক্রি করতে পারে যদি ট্রাফিকের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে সম্ভাব্য ক্রেতার সংখ্যাও বেড়ে যায়।

ব্লগিং করে ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে আয়ঃ

ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট এর পাশাপাশি অনেক ডিজিটাল প্রোডাক্ট রয়েছে যেমন পুরনো ওয়েবসাইটের ডোমেইন, ডোমেইন-হোষ্টিং,ব্লগ থিম ,সফটওয়্যার এবং গেমস, ই-বুক ইত্যাদি। একজন ব্লগারের যদি এই নিজস্ব প্রোডাক্টগুলো থাকে তাহলে সে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করতে পারে এবং সেখান থেকে উপার্জন করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ অনুবাদ করে অনলাইন আয় করার উপায়!

ব্লগিং অনেক ধরনের হয়ে থাকে তবে অন্যতম একটি ব্লগিং হচ্ছে যে রিভিউ লেখা অর্থাৎ যেকোনো প্রডাক্টের একটি চটকদার এবং ফলপ্রসূ রিভিউ লেখার মাধ্যমে ক্রেতার কাছে প্রোডাক্ট সম্পর্কে স্বচ্ছ এবং সুন্দর ধারণা দিলে ক্রেতা প্রোডাক্টটি কিনতে আগ্রহী হয়। ক্রেতা প্রোডাক্ট কিনলে সেখান থেকেও সে আয় করতে পারে। এভাবে একজন ব্লগার ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে ওয়েব সাইট থেকে আয় করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে আয়ঃ

প্রত্যেক  ব্লগারের অন্যতম আর্নিং সোর্স  হচ্ছে বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে আয়। অনেক ব্লগার আছে শুধু তাদের কনটেন্ট ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করার জন্য তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না আর্নিং করার। তারা শুধু চায় যে আমার কন্টেন্ট  অন্য কোন ব্যক্তি পড়ুক এবং পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করুক। বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে আপনার ওয়েবসাইট যদি একবার অ্যাপ্রুভাল পায় তাহলে আপনার আর কোন ঝামেলা নাই। অ্যাড কোম্পানিগুলোই আপনার ব্লগ এর মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আপনার একাউন্টে টাকা দিয়ে দিবে। আমরা সাধারণত তিন ধরনের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক দেখতে পারি।

গুগল এডসেন্স

  • ezoic.com
  • Media.net

তবে গুগল এডসেন্স এর জনপ্রিয়তা দেখা যায় প্রত্যেকটি ব্লগ সাইটের ক্ষেত্রে। বাংলা কন্টেন্টের  এর জন্য media.net অ্যাপ্রুভাল পাওয়া একটু কষ্টকর কিন্তু Ezoic.com  অ্যাপ্রভাল সহজেই পাওয়া যায়। ব্রগ  এর সাইটে Ezoic.com বেশি অর্থ প্রদান করে থাকে।কিন্তু আমাদের দেশে গুগল এডসেন্স এর জনপ্রিয়তা বেশি কারণ গুগল অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল পাওয়ার সবথেকে সহজ এবং একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট করাও তুলনামূলকভাবে সহজতর। ব্লগের শেষের বা দিকে নির্দিষ্ট স্থানে একটি অ্যাড দেখানোর মধ্য দিয়ে গুগল এডসেন্স ব্লগারকে অর্থ প্রদান করে থাকে। গুগল এডসেন্সের প্রদানকৃত অর্থ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল যেমন সিপিসি হারের এর উপর নির্ভরশীল। একটি বাংলা কন্টেন্ট থাকা এড ভিউয়ের  এবং ক্লিক এর জন্য 0.05 থেকে আমরা 5 ডলার  পর্যন্ত পেয়ে থাকি। বাংলা কনটেন্টের চেয়ে ইংরেজি কনটেন্টের ভিউজ অর্থাৎ ট্রাফিকের মূল্যমান বেশি হয়ে থাকে।  কোন সময় একটা এড এ ক্লিক এর জন্য 150 ডলার পর্যন্ত দিয়ে থাকে একটি ইংরেজী কনটেন্টের জন্য।তারা ব্লগিং এর নতুন তাদের জন্য গুগল এডসেন্স থেকে আয় করা প্রথম একটি পদক্ষেপ হতে পারে।

অনলাইনে কোর্স বিক্রি করার মাধ্যম আয়।

একজন জন ব্লগারের কোন না কোন বিষয়ে দক্ষতা থেকেই থাকে সে দক্ষতা থেকে সে একটি কোর্স তৈরি করে কোর্স  বিক্রি করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন। সাধারণত একজন ব্লগার একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকেন। যেমন কেউ ওয়েব ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভিন্ন অনলাইন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স তৈরি করে স্টুডেন্টদের মাঝে বিক্রি করতে পারেন। কোর্স বিক্রি করার মাধ্যমে আয়টি পরিপূর্ণ নির্ভরশীল কোর্সের  মধ্যে কতজন স্টুডেন্ট ইনরোল হবে তার ওপর অর্থাৎ মূল বিষয়টি হলো যত পরিমাণের ট্রাফিক আসবে তত পরিমাণে আয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

ব্লগিং করে লোকাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়ঃ

আমাদের আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা স্টোর এর বিজ্ঞাপন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তখন আমরা আমাদের যদি বেশি পরিমাণে ট্রাফিক ওয়েবসাইট থাকে সেই ওয়েব সাইটের যে কোন কনটেন্ট মধ্যে বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করার মাধ্যমে আয় সৃষ্টি করতে পারি।

গেস্ট ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয়ঃ (ব্লগিং করে আয়)

যারা নতুন ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করে তাদের জনপ্রিয়তার জন্য  বা ডোমেইন অথরিটি জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পোস্ট করে থাকে গেস্ট হিসেবে। একজন নতুন ব্লগার এর কাছে ভালো ডোমেইন অথরিটির ওয়েবসাইটের  ব্যাকলিংক খুবই মূল্যবান।

ওয়েবসাইটে পোস্ট করার বিনিময়ে আপনি  একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চার্জ করতে পারবেন

যে পোস্টটি আপনার ওয়েবসাইটে করা হবে সেটা স্পনসর্ড পোস্ট হিসেবে গণ্য হবে।

ব্লগিং ওয়েবসাইটে অনলাইন সার্ভিস প্রদান করার মাধ্যমে আয়ঃ

সাধারণত বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে যদি কাজ করা হয় সেখানে একটা কমিশন দেওয়া আবশ্যক। তাই বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার তার নিজস্ব ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলে বা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট খুলে সেখানে বিভিন্ন প্রকার ব্লগ প্রকাশ করে পাশাপাশি নিজেদের সার্ভিস প্রদান করে থাকে। তখন বিভিন্ন ট্রাফিক তাদেরকে ক্লায়েন্ট এ পরিণত হয় এবং সরাসরি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ নেওয়ার মাধ্যমে সার্ভিস প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে কোন কমিশন দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না সরাসরি আর্নিং করা যায় পাশাপাশি ব্লগে এড দেখার মাধ্যমেও ইনকাম হয়।

আরও পড়ুনঃ ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়!

ব্লগিং করতে হলে প্রথমত একটি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আপনার অর্জিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে আপনি লেখালেখি করতে পারবেন। ব্লগিং বিষয়টা একটি সৃজনশীল ও শখের বিষয় পাশাপাশি যদি প্রফেশনাল কাজ করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে একটি ব্লগ লিখতে গেলে কীওয়ার্ড রিসার্চ, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজড আর্টিকেল লেখার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। যাহোক একজন স্টুডেন্ট বা তার বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তি কাজের পাশাপাশি  একটি ওয়েবসাইটে তার কনটেন্ট পাবলিশ করার মাধ্যমে গুগল এডসেন্স সহ আরো বিভিন্ন মাধ্যমে আয় সৃষ্টি করতে পার।  আর একজন ভাল কনটেন্ট রাইটার এর চাহিদা সব সময় বিদ্যমান।

আশা করি আজকের পোস্টে ব্লগিং করে আয় করার উপায় গুলো সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। এর পরেও আপনাদের কোন প্রশ্ন অথবা মতামত থাকলে কমেন্ট করা জানান!

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments